বৈদ্যুতিন যুগে ভাষা দিবসের কিছু চিন্তা ভাবনা

দেবারতি হালদার

বেশ অনেকগুলো বছর ভাষা অধিকার নিয়ে অনেক বিশ্লেষণ করার পর কিছু জ্ঞান উপলব্দি করেছি : ভাষা অধিকার একমাত্র মাতৃভাষায় চিন্তা প্রকাশের অধিকার মাত্র নয়. সেই ভাষা যেন এমন ভাবে ব্যবহার না করা হয় যা অন্য মানুষের চিন্তা ধারাকে আঘাত করে. এটা অধিকারের থেকেও দায়িত্ত্বকে বেশি করে বাড়িয়ে দেয়।  বিগত অনেক বছর ধরে এই রকম অনেক কমপ্লেন দেখে নিজেও শিখেছি কোন ভাষা কিভাবে প্রয়োগ করলে ভাষা অধিকার টি খুইয়ে ফেলতে হয়. তবে এই অধিকার খুইয়ে ফেলাটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ক্ষেত্রেই আমরা বেশি দেখে থাকি। এই নিয়ে কত বাগ -বিতন্ডা। কোন প্রতিবাদী ভাষা আইনের চোখে বেআইনি নয় আর কোন প্রতিবাদী ভাষা সত্যি ই বেআইনি এ নিয়েও বিচারকদের কম মন্তব্য  নেই. প্রতিটি দেশের নিজস্ব আইনি বিশ্লেষণ আছে এই নিয়ে। সে থাকলেও আমরা অনেক সময়েই দেখি সেই আইনি বিশ্লেষণ অনেকটাই এক ধাঁচের হয়. মহিলাদের বাক স্বাধীনতা নিয়ে অনেক রিসার্চ হচ্ছে। আমার রিসার্চ একটু অন্য রকম. আমি ঠিক বাক স্বাধীনতা নয়, ভাষা স্বাধীনতা আর দায়িত্ব নিয়েই মেতে থাকতে ভালোবাসি। বেশ কিছু দিন আগে এই রকম দু-একটি কেস দেখছিলাম:  বিবাহিত পুরুষ অধ্যাপক তাঁর দায়িত্বাধীনে অনুসন্ধানরতা  কন্যাসমা ছাত্রীকে অত্যন্ত উত্তক্ত করেছিলেন এই ভাষা স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে। বৈদ্যুতিন মাধ্যমে ক্রমাগত একটি বা দুটি শব্দ, ছন্দ এবং ছত্র  ছাত্রীকে পাঠাতেন। সেই শব্দ, ছন্দ ও ছত্র  গুলি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠলো যে ছাত্রীটিও আর সহ্য করতে পারলোনা। সংখ্যায় গুনলে এগুলি অতি   নগন্য। কিন্তু সেই সবই, ছন্দ , ছত্রের মধ্যে নিহিত অর্থ টি শালীন নয়. অধ্যাপক যখন দেখলেন ছাত্রী টি কোনো সাড়া দিচ্ছেনা , তিনি কিছু নির্বাক অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ভিডিও পাঠাতে শুরু করলেন।  এবারে সেই ছাত্রীটি শালীনতা হানির অভিযোগ আনতে বাধ্য হলো. অধ্যাপক পাল্টা জবাব দিলেন : যখন শব্দ বা ছত্র গুলি দেখেও সে চুপ করেছিল , মানে কোনো রকমের অস্বস্তি প্রকাশ করেনি, তখন কি করে ধরে নেওয়া যাবে সে এগুলি পছন্দ করেনি?  পাঠক /পাঠিকা  , এই ধরণের কেস খুব চেনা চেনা লাগছেনা? অধ্যাপক- ছাত্রীর জায়গায় সহকর্মী, বন্ধু, কাছের বা দূর দম্পর্কের আত্মীয় যে কাউকে বসাতে পারেন। ভাষা যে কত শক্তিশালী হতে পারে তা এই ধরণের তথাকথিত “নগন্য” কেস থেকেও বুঝতে পারবেন সবাই। ভাষার অপব্যবহার (বিশেষত মহিলাদের  বিরুদ্ধে ) টেনে আনতে পারে অনেক রকম আইনি বিপদ। ছোটদের কথা টা আজ আর বললাম না. আজকে একটি বিশেষ কেস দেখে মনে হলো এই বিষয়েও কিছু বক্তব্য প্রকাশ করা উচিত। কেরালা হাই কোর্ট রায় দিয়েছেন যখন কোনো স্ত্রী তাঁর স্বামীর বারংবার বারণ অমান্য করে তৃতীয় অচেনা পুরুষের সঙ্গে সময় অসময় না দেখে ক্রমাগত অবান্তর ফোনে কথা বলে যান তখন সেই ব্যবহার মানসিক নির্যাতনের পর্যায়ে পরে. না না! মনে করবেন না আমি আবার ফেমিনিজম নিয়ে বুলি কপচাবো। কিন্তু এই এক রায় সেই স্বামীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া চাই যাঁরা তাঁদের স্ত্রীদের বারণ  অমান্য করে অন্য মহিলার সঙ্গে ক্রমাগত অবান্তর কথা বলে যান. একটু ভেবে দেখুন: এই কথা বলা যদি কর্ম ক্ষেত্রে জন্যে, কাজের জন্যে জরুরি হয় তাহলে আইনি বুমেরাং টি যিনি অভিযোগ করছেন তাঁর দিকে  ঘুরে যাবে। আর নাহলে জোর করে নিজেকে প্রেমিক প্রবর ভেবে নেওয়াটা অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে যাবে। ভাষার আর  দোষ কি? ভাষাকে যে যেভাবে ব্যবহার বা অপব্যবহার করতে চাইছে দায়িত্বটি তাঁর।

এবার সময় এসেছে আমরা সবাই ভাষার অপব্যবহার নিয়ে একটু আলোচনা করি, ভাবি আর সেই বিবেচনা গুলি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে জানাই। কারণ তারা আমাদের জানবার আগে অনেক কিছুই জেনে গেছে। 

২১/২/২০২২

Leave a comment